নতুন রাসায়নিক উপাদানের জন্ম কিভাবে হলো? New Chemical Elements
দ্বিতীয় থ্রেশহোল্ড এর পরে মহাবিশ্বে প্রচুর নক্ষত্র ছিল। তবে বেশিরভাগ জায়গা ছিল শীতল, অন্ধকার এবং ফাঁকা। পুরো মহাবিশ্বে প্রায় মাত্র দুটি পদার্থ ছিল হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম। এগুলি উভয়ই হালকা গ্যাস ছিল এবং এর মধ্যে একটি সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ছিল। যেন চিত্রশিল্পীকে মাত্র দুইটি রং দেয়া যার মধ্যে একটি অন্নটির সাথে মিশে না। মহাবিশ্বের জন্য খুব আকর্ষণীয় কিছু তৈরি করা অসম্ভব। আরও রঙ অর্থাৎ আরও রাসায়নিক উপাদান প্রয়োজন। এটাই হচ্ছে আজকের তৃতীয় থ্রেশহোল্ডের কাজ।
এটা পর্যায় সারণি। দেখতে পারছেন সমস্ত উপাদান এখানে আছে। সমস্যা হল আমরা যে সময়ের কথা বলছি তখন মহাবিশ্বে ছিল শুধু হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম।
যে ইউনিভার্সে কেবলমাত্র হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম ছিল, সেখানে আপনি কি তৈরি করতে পারেন? ওয়েল… কিছুই না। আপনি গ্রহ তৈরি করতে পারবেন না, মোবাইল তৈরি করতে পারবেন না। না কোন প্রাণী। সুতরাং এটি আসলে একটি সমস্যা। বাকি উপাদান কোথা থেকে আসলো?
উত্তর হচ্ছে নক্ষত্র থেকে।
এখনও অবধি আমাদের গল্পগুলি এমন এক ইউনিভার্স সম্পর্কে বলছিল যা কেবল শীতল হচ্ছে। এবং এই শীতল হওয়া খুবি গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ এর জন্যই পদার্থ এবং শক্তি একে অপরের থেকে আলাদা হতে পেরেছিল। এবং তা থেকে পদার্থের বিভিন্ন রূপ আমরা দেখেছি। তবে এখন আমাদের কথা বলা দরকার মহাবিশ্ব যে উপায়ে উত্তপ্ত হতে শুরু করে।
এবং এটি ঘটেছে নক্ষত্রর ভিতরে। নক্ষত্রর ভিতর এই উত্তপ্ত হওয়াই রান্না করেছে আমাদের বাকি উপাদানকে। আমাদের সবথেকে কাছের নক্ষত্র হচ্ছে আমাদের সূর্য। সূর্যের পৃষ্টের তাপমাত্রা ৫,৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এর কেন্দ্রের তাপমাত্রা ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওয়াও একটু ভেবে দেখুন পানি ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ফুটতে থাকে। যা পরম শূন্যে বা সবচেয়ে ঠাণ্ডা তাপমাত্রার চেয়ে ৩৭৩ ডিগ্রি উপরে। আর সূর্যের তাপমাত্রা ফুটন্ত পানির চেয়ে ৪০,০০০ গুন বেশি গরম।
এই প্রচণ্ড তাপমাত্রায় প্রোটনের প্রচুর শক্তি থাকে, যা আমরা গত পর্বে দেখেছি। তারা একে অন্নের সাথে তীব্রভাবে ধাক্কা খায় এবং অবশেষে ফিউজ হয়ে হিলিয়াম নিউক্লিয়াই গঠন করে। এটি বেশ কঠিন একটি কাজ, তবে এখানে একটি সমস্যা আছে। এই দেখুন এটি হচ্ছে কার্বন, যার কেন্দ্রে আছে ৬ টি প্রোটন। তো কার্বন পেতে হলে আমাদেরকে ৬ টি প্রোটনকে একসাথে ফিউজ করতে হবে। এবং তার জন্য আরও বেশি তাপমাত্রা দরকার। প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডিগ্রি। এবার আয়রন কে দেখুন, ২৬ টি প্রোটন! আপনাকে ২৬ টি প্রোটন একসাথে ফিউজ করতে হবে আয়রন পেতে হলে। এবং তার জন্য প্রয়োজন ৩ বিলিয়ন ডিগ্রি তাপমাত্রা। তাহলে, আমাদের তরুণ ইউনিভার্সে আপনি কোথায় তিন বিলিয়ন ডিগ্রি তাপমাত্রা খুঁজে পাবেন?
উত্তরটা হল: মৃত নক্ষত্রর ভিতর। হ্যাঁ মৃত্যু পথযাত্রী নক্ষত্রর মধ্যে। কেন এখানে? মনে রাখবেন যে বেশিরভাগ নক্ষত্র তাদের জীবনের বেশিরভাগ অংশ, প্রায় 90 শতাংশ সময় প্রোটনকে ফিউজ করেছে। হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াই কে হিলিয়াম নিউক্লিয়াই। কিন্তু কি হয় যখন জ্বালানী ফুরিয়ে যায়? ওয়েল নক্ষত্রর কেন্দ্রের চুল্লি আর নক্ষত্রকে সাপোর্ট দিতে পারে না। গ্রাভেটি নিয়ে নেয় এবং পুরো জিনিসটি ধসে পড়ে। এখন সেই ধস এতোটাই হিংস্র যে কেন্দ্রে অতি উচ্চ তাপমাত্রা তৈরি করে। কত উচ্চ? সেটা নির্ভর করে কত বড় নক্ষত্র তার উপরে। কত বেশি জিনিস আছে এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কত শক্তিশালী তার উপরে। চলুন একটি ছোট নক্ষত্র দেখে আসি। ছোট নক্ষত্রর কেন্দ্রে বেশি চাপ নাই। এটি কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে কম তাপমাত্রায় ধীরে ধীরে হাইড্রোজেন পোড়ায়। এর জীবন খুবি দীর্ঘ এবং মন্থর। এটি যখন জ্বালানী শেষ হয়ে মাড়া যায় তখন ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায়। Campfire এর আগুনের মতো। খুব আকর্ষণীয় কিছু ঘটে না।
বড় নক্ষত্র আরও আকর্ষণীয়। তারা তাদের কেন্দ্রে উচ্চ তাপমাত্রা তৈরি করে, তারা হাইড্রোজেনকে অনেক বেশি সহিংস-ভাবে পোড়ায়, এবং যখন হাইড্রোজেন শেষ হয়ে যায় তারা ধসে পরে অনেক বেশি তাপমাত্রা উৎপন্ন করে। সেই তাপমাত্রা ২০০ মিলিয়ন ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। নিশ্চয়ই মনে আছে একটু আগে বলেছিলাম এই তাপমাত্রায় আপনি ৬ টি প্রোটন ফিউজ করে কার্বন তৈরি করতে পারবেন। সুতরাং তারা কার্বন গঠনের জন্য হিলিয়াম পোড়ানো শুরু করে। যখন হিলিয়াম শেষ হয়ে যায় তখন ঘটনা দ্রুত থেকে দ্রুততর হতে থাকে। হিলিয়াম শেষ হয়ে গেলে ১ বিলিয়ন তাপমাত্রায় কার্বন ফিউজ করে নিয়ন তৈরি করে। এরকম একের পর এক ধসে এটি নিয়ন ফিউজ করে অক্সিজেন করে, অক্সিজেন থেকে সিলিকন করে, এবং সবশেষে ৩ বিলিয়ন ডিগ্রি তাপমাত্রায় সিলিকন ফিউজ করে লোহা তৈরি করে। এবং এখানেই এই প্রোক্রিয়া সমাপ্তি ঘটে। মৃত নক্ষত্রর এই শেষ কয়েক মিলিয়ন বছরের প্রোক্রিয়া Cesare Emiliani খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন।
সূর্যের থেকে ২৫ গুন বড় তারা, কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে কেন্দ্রে হাইড্রোজেনকে নিঃসরণ করবে, অর্ধ মিলিয়ন বছর ধরে হিলিয়াম পোড়াবে। এর কেন্দ্র এরকম যতই করতে থাকবে, এর তাপমাত্রাও বাড়তে থাকবে। 600 বছর কার্বন পোড়াবে ছয় মাস অক্সিজেন এবং এক দিনের জন্য সিলিকন। এই সময়ের মধ্যে, তারার কেন্দ্র যেন বিভিন্ন উপাদানের কেকের লেয়ার। এবং শেষ পর্যন্ত, যখন এটি লোহা দাড়া পরিপূর্ণ তখন এটি আর যেতে পারে না। এবং ধসে পরে। এটি এর বাইরের স্তরগুলিকে মহাকাশে ছড়িয়ে দেবে আশেপাশে। নিকটবর্তী নক্ষত্রর মাঝে। যেন শস্য খেতে সার দেয়ার মতো।
Well, That’s Great. এখন পর্যন্ত আমরা জানলাম পর্যায় সারণির আয়রন পর্যন্ত উপাদানগুলো কীভাবে তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাকি গুলো? ওরা কোথা থেকে আসলো।
উত্তর হচ্ছে বাকি উপাদানগুলি মারা যাচ্ছে তারা থেকে নয়, বিস্ফোরিত নক্ষত্রর মধ্যে উৎপাদিত হয়। হ্যাঁ সত্যি। বিস্ফোরিত নক্ষত্র। যখন খুবি বড় নক্ষত্রর কেন্দ্র আয়রন দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে যায় তখন তা ধসে পরে বিস্ফোরিত হয়ে অকল্পনীয় তাপমাত্রা তৈরি করে। এই বিস্ফোরণগুলিকে বলা হয় সুপারনোভা। সুপারনোভা জ্যোতির্বিদ্যায় সব থেকে দর্শনীয় জিনিসগুলির মধ্যে একটি। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সুপারনোভায় পর্যায় সারণির সকল উপাদান তৈরি হয়ে যায়। এটা এতোটাই উজ্জ্বল এবং উচ্চ তাপমাত্রার হয় যে সপ্তাহ জুড়ে পুরো মহাবিশ্ব থেকে দেখা যায়।
So, যেখানে মৃত নক্ষত্র, যেখানে সুপারনোভা ছিল, সেখানে এখন ধূলিকণার মেঘ। যার মধ্যে রয়েছে পর্যায় সারণির প্রত্যেকটি উপাদান। যা মহাবিশ্বে ভেসে বেড়াচ্ছে।
মনে আছে নিশ্চয়ই আমরা এই ভিডিও শুরু করেছিলাম এমন এক মহাবিশ্বে যেখানে মাত্র হিলিয়াম এবং হাইড্রোজেন ছাড়া কিছু নেই। এবং এই প্রোক্রিয়া শেষে আমরা পেয়ে গেলাম পুরো পর্যায় সারণি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে কোটি কোটি বছর এবং কোটি কোটি সুপারনোভা পরেও মহাবিশ্বের পরমাণুগুলির 98 শতাংশ হচ্ছে হিলিয়াম এবং হাইড্রোজেন। বাকি সমস্ত কিছু মাত্র ২ শতাংশ। আপনার মনে হতে এ আর এমন কি? কিন্তু এই ২ শতাংশই হচ্ছে বিগ ডিল। এদের ছাড়া সম্ভব হত না আপনাকে আমাকে তৈরি করা, কোন প্রাণ তৈরি করা। এটিই পার্থক্য গড়ে দেয়। একারণেই এই কোর্সে নক্ষত্রর মৃত্যুর মাধ্যমে নতুন রাসায়নিক উপাদান তৈরি গুরুত্বপূর্ণ তৃতীয় threshold of complexity। আজ অনেককিছু কভার করে ফেললাম, তবে আপনার কাজ হচ্ছে আরও গভীরে গিয়ে এ সম্পর্কে জানা। পর্যায় সারণি সম্পর্কে বিস্তারিত আলাপ করতে আমাদের একটি Special Episode আছে। এখান থেকে দেখে নিতে পারেন।
কোর্সের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এখানে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন